1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

আমার হাত দুটি ধরে তুমি নিয়ে চলো সখা : পর্ব ৬

  • Update Time : শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৫০৮ Time View

এক সন্ধের সময় আকাশের নক্ষত্র দেখতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন থেলিস। সে ভাবেই হাঁটতে হাঁটতে এক বৃদ্ধার সঙ্গে ধাক্কা লাগে তাঁর। বৃদ্ধা নিজেকে সামলে নিলেও থেলিস কিন্তু নিজের ভারসাম্য রাখতে না পেরে পড়ে গিয়েছিলেন একটি গর্তে। তবে, গর্ত থেকে ওঠার পর তাঁকে সেই বৃদ্ধা কোনও রকম মায়া তো দেখানইনি, বরং রীতিমতো ধমকে ছিলেন। এই থেলিসকেই দর্শনের জনক বলে মনে করা হয়।

উপমন্যু রায়

‌আমি যখন টুয়েলভে পড়ি, তখনই দর্শন নিয়ে আমার মনে আগ্রহ জন্মায়। যদিও সেই আগ্রহের মূলে কেরিয়ার সংক্রান্ত কোনও ভাবনা জড়িত ছিল না। বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে আরও পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষা লাভ করার কথাও তখন আমি ভাবিনি।

আসলে ছোট থেকেই আমি ভাবতে ভালবাসি। আমি একা থাকলেই কত যে আজগুবি সব ঘটনার কথা ভাবতাম তখন, তার ইয়ত্তা নেই। আমার আত্মীয় পরিজন থেকে পরিচিত গুরুজনদের মধ্যে যাঁরা আমাকে ছোট থেকেই চেনেন, তাঁরা বলে থাকেন, আমি নাকি অতিরিক্ত কল্পনাপ্রবণ।

তাঁদের এমন ভাবনা অবশ্যই পুরোপুরি ভুল নয়। বাস্তবিকই আমাদের চারপাশের অনেক কিছুই, যেমন প্রকৃতি থেকে মানুষের জীবনযাপন, তখন থেকেই আমাকে ভাবাত। মাঝে মাঝে সব কিছুই কেমন যেন অদ্ভুত লাগত। তবে আমি সবসময়ই যে কল্পনার জগতে বাস করতাম, তা কিন্তু নয়।

যাই হোক, টুয়েলভে পড়ার সময় আমার যিনি গৃহশিক্ষক ছিলেন, তিনি কিন্তু আমাদের বাড়িতে আমাকে পড়াতে আসতেন না। বরং তাঁর বাড়িতে আমি পড়তে যেতাম। আমার সঙ্গে আরও তিনজন পড়ত। পড়ানোর ফাঁকে সেই শিক্ষক আমাদের ইতিহাস থেকে নানা রকম কাহিনি শোনাতেন। আমরা মুগ্ধ হয়ে সে সব গল্প শুনতাম। তখন সেইসব কাহিনি যেন বাস্তব হয়ে আমার চোখের সামনে ভাসত।

সেই সময়ই একদিন তিনি বলেছিলেন গ্রিক দার্শনিক এবং গণিতজ্ঞ থেলিসের কথা। তিনি দর্শনের জনক হিসেবে পরিচিত। যিশু খ্রিস্টের জন্মের প্রায় সাড়ে ছশো বছর আগে ছিল তাঁর কর্মজীবন। তাই তাঁর সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়, তা নিয়েও অনেক বিভ্রান্তি আছে। তবু নানা দ্বিধা–দ্বন্দ্ব ঘাত–প্রতিঘাতে কিছু কিছু ঘটনা স্বীকৃতি পেয়েছে।

যেমন, পৃথিবীর অপার বৈচিত্র‌্য দেখে তিনি বিস্মিত হতেন। সেই বিস্ময়ই তাঁর মনে নানা জিজ্ঞাসার জন্ম দেয়। তিনি সরাসরি প্রশ্ন করেছিলেন, এই বিস্ময়কর পৃথিবীর উৎপত্তি হল কী ভাবে? তিনিই প্রথম এই জগৎ সৃষ্টির মূল উপাদান কী, সেই প্রশ্নও তুলেছিলেন। আর সেইসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়েই তিনি প্রবেশ করে যান দর্শনের জগতে। তাঁর ভাবনাচিন্তা সেই সময় গ্রিসে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল।

সেই গৃহশিক্ষকই আমাদের বলেছিলেন, তাঁর মাত্র দুটি উক্তিই প্রথমে অক্ষত অবস্থায় গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন। একটি হল, ‘সব কিছুই ঈশ্বরে পরিপূর্ণ।’ এবং অন্যটি হল, ‘সমস্ত কিছুর আদিমতম উপাদান হল জল।’ এই দুটি ভাবনার সত্যতা প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়।
তবে জগৎ সংসার যে তাঁকে একটু অন্য ভাবে হলেও ভাবিয়েছিল, তা কিন্তু সত্য। বলা বাহুল্য, থেলিসের এমন ভাবনার মধ্য দিয়েই পৃথিবীতে সূচনা হয়ে যায় দার্শনিক চিন্তার। তাই তাঁকে দর্শনের জনক বলে অনেকে স্বীকারও করে নিয়েছেন।

এ ছাড়া তাঁর আরও কয়েকটি উক্তি পাওয়া গিয়েছে। যেমন, নিজেকে জানো, কোনও কিছুরই অতিরিক্ত ভালো নয়। কথাগুলো আজ শুনলে মনে হতে পারে, এ আবার নতুন কী কথা! কিন্তু সেই সময় এই সামান্য কথাগুলিই কাউকে সে ভাবে ভাবায়নি। তাই তার দার্শনিক ব্যাখ্যাও তাঁর মতো করে আগে আর কেউ দিতে পারেননি।
যদিও থেলিসের সময়কাল এতটাই পুরনো যে, তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় না। তাঁর জন্ম হয়েছিল যিশু খ্রিস্টের জন্মেরও ৬২৪ থেকে ৬২৫ বছর আগে। মৃত্যু ৫৪৭ থেকে ৫৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। তাঁর আগ্রহ ছিল নীতিশাস্ত্র, অধিবিদ্যা, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে। গণিত চর্চার ক্ষেত্রে থেলিসের উপপাদ্যও যথেষ্ট খ্যাতি পেয়েছিল।
শোনা যায়, ব্যবসার কাজে থেলিস অনেক জায়গায় গিয়েছিলেন। তবে যেখানেই যান না কেন, ব্যবসার পাশাপাশি সেখানকার অন্যান্য বিষয়ও তাঁকে প্রভাবিত করত। এ ভাবেই মিশরে গিয়ে তিনি জ্যামিতির প্রেমে পড়ে যান। সে দেশের পুরোহিতদের কাছ থেকে তিনি নাকি জ্যামিতি শিখেছিলেন। সেইজন্য মিশরের পুরোহিতদের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতার শেষ ছিল না। সেই মিশরীয় জ্যামিতি তিনিই প্রথম গ্রিসে নিয়ে আসেন।
ব্যবসায়ও ভালোই সফল হয়েছিলেন তিনি। ইচ্ছে করলেই সারাজীবন আরামে আয়েশে কাটিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু মিশর থেকে গ্রিসে ফেরার পর ব্যবসার কাজে সারা জীবন ব্যয় করে দেননি। আবার অগাধ অর্থ ছিল বলে অলস ও বিলাসবহুল জীবনও কাটিয়ে দিতে চাননি। বরং ব্যবসার বাইরে নিজের অর্জিত জ্ঞান বিশ্লেষণে ব্যস্ত থাকতেন। সেই সময় তিনি নিজেকে উজার করে দেন দর্শন এবং জ্যামিতি চর্চায়। এ ব্যাপারে একটি কাহিনির কথা শোনা যায়।

তিনি আকাশ দেখলে আত্মমগ্ন হয়ে পড়তেন। এমনই এক সন্ধের সময় আকাশের নক্ষত্র দেখতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন। সে ভাবেই হাঁটতে হাঁটতে এক বৃদ্ধার সঙ্গে ধাক্কা লাগে তাঁর। বৃদ্ধা নিজেকে সামলে নিলেও থেলিস কিন্তু নিজের ভারসাম্য রাখতে না পেরে পড়ে গিয়েছিলেন একটি গর্তে। তবে, গর্ত থেকে ওঠার পর তাঁকে সেই বৃদ্ধা কোনও রকম মায়া তো দেখানইনি, বরং রীতিমতো ধমকে ছিলেন।

তথ্য বলছে, থেলিস কিছু যুগান্তকারী উপপাদ্যের জনক। তাঁর জ্যামিতি থেকেই বীজগণিতের ধারণা পাওয়া যায়। তিনি তাঁর ছাত্রদেরও নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতেন। মূলত তাঁর অনুপ্রেরণাতেই পিথাগোরাস জ্যামিতি চর্চার জন্য মিশরে গিয়েছিলেন।

থেলিসের ভাবশিষ্য পিথাগোরাসকে অবশ্য জেনেছিলাম মাধ্যমিক স্তরেই। পিথাগোরাসের উপপাদ্য আজও গণিতবিদদের কাছে বিখ্যাত হয়ে রয়েছে। এই উপপাদ্য ইউক্লিডীয় জ্যামিতির অন্তর্ভুক্ত সমকোণী ত্রিভুজের তিনটি বাহু সম্পর্কিত একটি সম্পর্ক। লম্বের বর্গের সঙ্গে যদি ভূমির বর্গ যোগ করা যায়, তা হলে পাওয়া যায় অতিভুজের বর্গফল।

যদিও অনেকের ধারণা, এই উপপাদ্য শেষ পর্যন্ত প্রমাণ করে যেতে পারেননি পিথাগোরাস। তাঁর উত্তরসূরীরা তাঁর সেই অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করেছিলেন। তাঁর উত্তরসূরীদের মধ্যে ফিলোলাউস এবং আরকিটাস উল্লেখযোগ্য।

আবার অনেকে বলেন, পিথাগোরাসের উপপাদ্যের জনক নাকি পিথাগোরাস নন। পিথাগোরাসের অনেক আগেই যে সব পূর্ণসংখ্যা তাঁর উপপাদ্যকে সিদ্ধ করে, মানে ট্রিপলেটের ব্যবহার ব্যবিলীয়নরা জানতেন। মনে রাখতে হবে, পিথাগোরাসের জন্ম যিশুর জন্মের ৫৭০ বছর আগে। তুলনায় মেসোপটেমিয়ায় ব্যবিলীয়ন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল যিশুর জন্মের ২ হাজার বছর আগে।
আবার তথ্য বলছে, পিথাগোরাসের উপপাদ্যের ধারণা যিশুর জন্মের ৮০০ থেকে ৫০০ বছর আগে থেকেই ভারতীয় হিন্দু গণিতবিদদের কাছে প্রচলিত ছিল। সুলবা সূত্র থেকে জানা যায়, যিশুর জন্মের ৬০০ বছর আগেই ভারতীয়দের মধ্যে বৌধায়ন, আপস্তম্ব, কাত্যায়ন পিথাগোরাসের উপপাদ্য নানা ভাবধারায় প্রকাশ করেছিলেন। ভারতীয় গণিতজ্ঞ ভাস্করাচার্য তাঁর ‘লীলাবতী’ গ্রন্থে নানা প্রশ্নের মাধ্যমে আসলে পিথাগোরিয়ান সেই ট্রিপলেটেরই উল্লেখ করেছেন।
অবশ্য মাধ্যমিক স্তরে আমাকে সব থেকে বেশি প্রভাবিত করেছিল আর্কিমিডিস। তাঁর জীবন নিয়ে যে সব কাহিনি তখন স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে শুনেছিলাম, তা আমাকে আজও ভাবায়। তখন স্কুলপাঠ্যে আর্কিমিডিসের একটি বিখ্যাত সূত্র পড়তে হয়েছিল। সেই সূত্র আবিষ্কারের পিছনে ছিল একটি চমৎকার গল্প।
খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক সেটা। সাইরাকিউসের রাজা হিয়েরো ছিলেন আর্কিমিডিসের কাছের বন্ধু। সেই হিয়েরো একবার এক স্যাকরাকে দিয়ে নিজের জন্য একটি সোনার মুকুট তৈরি করেছিলেন। কিন্তু, তাঁর সন্দেহ হল, স্যাকরা তাঁকে ঠকিয়েছে। মুকুটে সোনার সঙ্গে খাদ মিশিয়েছে। নিজের সন্দেহ ঠিক কিনা যাচাই করে দেখার জন্য আর্কিমিডিসকে দায়িত্ব দেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে ভাবার জন্য হিয়েরোর কাছে আর্কিমিডিস কিছু সময় চান। বাড়ি ফিরে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করেন তিনি। কয়েকদিন পর একটি ঘটনা ঘটে। স্নান করার জন্য জলপূর্ণ চৌবাচ্চায় নামা মাত্রই আর্কিমিডিস দেখলেন বেশ কিছুটা জল উপচে চৌবাচ্চার বাইরে পড়ে গেল।

ব্যস, সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর কাছে সব কিছু জলের মতোই পরিষ্কার হয়ে যায়। ‘ইউরেকা ইউরেকা’, মানে ‘পেয়েছি পেয়েছি’ বলে ছুটে যান হিয়েরোর কাছে। রাজা তো ভেজা শরীরের প্রায় নগ্ন আর্কিমিডিসকে দেখে অবাক। কিন্তু তাঁর বিস্ময়কে পাত্তা না দিয়ে আর্কিমিডিস বললেন, ‘রাজা, তোমার মুকুটটা নিয়ে এসো।’
রাজা মুকুটটা নিয়ে এলে তিনি বললেন, ‘‘ওই মুকুট জলে ডুবালে যতখানি জল উপচে পড়বে, তা মেপে দেখো। তার পর যতখানি সোনা ওই মুকুটে দেওয়া হয়েছে বলে তুমি জানো, ততখানি সোনা নিয়ে এসে জলে ডোবাও। দেখো তাতে কতখানি জল উপচে পড়ে! দুটো হিসেবই যদি এক হয়, তা হলে ভাববে মুকুটে খাদ নেই। আর, যদি শুধু সোনা ডোবানোয় যত জল উপচে পড়েছে, তার চেয়ে বেশি জল মুকুট ডোবানোয় উপচে পড়েছে, তা হলে দুই ক্ষেত্রে উপচে পড়া জলের মধ্যে যে পরিমাণ বেশি জল মুকুট ডোবানোয় উপচে পড়েছে, তা–ই হল খাদের পরিমাণ।’’
বলা বাহুল্য, বন্ধু আর্কিমিডিসের এই আবিষ্কার মুগ্ধ করেছিল রাজা হিয়েরোকে। (‌ক্রমশ)‌‌‌‌‌‌‌

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..